প্রতীচ্যের সাহিত্য তত্ত্ব

এ বড়ো সুখের সময় নয়, এ বড়ো আনন্দের সময় নয়, এ বড়ো আনন্দের সমর নয়। এ সময় আসলে সংশয়ের অনিশ্চয়তার মীমাংসাবিহীন জিজ্ঞাসার। এক জিজ্ঞাসার ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই অন্য জিজ্ঞাসায় পৌঁছোনোর। এ সময় উদ্দাম গতির এবং একই সঙ্গে গন্তব্যবিহীন যাত্রারও। একুশ শতকের শূন্য দশক পেরিয়ে এলাম ছোটবড়ো মরীচিকা ও গোলকধাঁধার মধ্য দিয়ে। চোরাবালি আগেও ছিল, এখন তার বহর বেড়েছে এত যে দিগন্ত বলে নেই কিছু। সেই ঘোড়সওয়ার রয়ে গেছে শুধু আকাঙ্ক্ষায়। আত্মখননের পালা শেষ হয় নি। তবু, আছে তাতে নতুন নতুন আরম্ভ।

ভূবনায়ন বহুদিন আগেই এসে গেছে বৌদ্ধিক জীবনে। মননে তার অনুশীলনের আয়োজন অবাধ, অগাধ। প্রতীচ্যের সাহিত্যতত্ত্ব সম্পর্কে কৌতূহল তাই অনিবার্যভাবেই প্রসারিত হয়েছে আরও। বিশ্বারিত বাঙালির ব্যাপক আগ্রহকে সম্মান জানাতে এই বইয়ের নতুন পরিবর্ধিত সংস্করণের পরিকল্পনা করতে হলো। সর্বত্র চাহিদা সত্ত্বেও নানাকারণে বইটি দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছিল ইদানীং। দেজ পাবলিশিং এর সুযোগ্য কর্ণধার শ্রী সুধাংশু শেখর দে-র কল্যাণে নতুনভাবে বেরোচ্ছে যে-সংস্করণ, তাতে ইতিহাসের ধারাবাহিকতাকে মান্যতা নিয়ে রোমান্টিকতাবাদ ও বাস্তবতাবাদ সম্পর্কে দুটি বয়ান যুক্ত হল। সুদেী পাঠকের তরফে অনুরোধ রয়েছে আরও কিছু প্রতিবোনের জন্যে। পরবর্তী সংস্করণে সেইসব হয়তো বা লাগ করব।

কোনো কৃভাই এক সম্পন্ন করা যায় না। সহযোগী সপ্তাদের ভূমিকা এক্ষেত্রেও অনস্বীকার্য। আশৈশব বন্ধু রণবীর পুরকায়স্থ এবং সহধর্মিণী স্বপ্না ভট্টাচার্য এই উদ্যমেও আমার মৌল প্রেরণা। আমার ছাত্র ড. শেখ সজ্জল হোসেন এবং স্নেহভাজন অপু ও সুমন প্রদীপের সলতে হিসেবে কতখানি সক্রিমা ছিল, তা কেবল আমিই জানি। আর, উপাচার্যের সচিবালয়ের নীরব ‘কর্মী’ স্নেহাস্পদ সন্দীপ দে-র অকুণ্ঠ সহযোগিতা দ্বিরালাপিক জীবনের প্রতি আমার আহাকে পুনর্নবায়িত করেছে। জীবনে বিচ্ছেদ ও চলনানতার দ্বিবাচনিক গ্রহণা কত অমোঘ সত্য, তা ‘প্রতীচ্যের সাহিত্যতত্ত্ব এর পুনঃপ্রকাশে নতুনভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যেন। পথ আমাদের কেবলই

নিয়ে যাচ্ছে সাননের দিকে, পথের সাথী ও পাথেয় বদলে যাচ্ছে চলার আবেগে।

ধ্রুব শুধু অবারিত চলা, জিআসার পরস্পর যে-কোনো মূলো অব্যাহত রেখে। এও

তো সময়েরই পাঠ। একই সময়ে তো কত অবয়ব কত ভ্রান্তি, কত কুহক, কত সত্যক্রম। আমরা এখন কালের যে-পরিধিতে পৌঁছেছি, কোনো অভিজ্ঞতা কোনো উপলব্ধি কোনো সিদ্ধান্ত স্থির ও অনড় নয়। এমনকী, সাও নয় নিশ্চল। বিনির্মাণে পুনর্নির্মাণে আত্মবিনির্মাণে কেবলই পথ ও পাথেয় চিনে নেওয়া নতুন নতুন পদ্ধতিতে। এই তো জীবন। প্রতি প্রশ্নে বিদ্ধ হোক সমস্ত অবস্থান। আরও জোরালো হয়ে উঠুক পুনঃসংজ্ঞায়ন, পুনঃ প্রসঙ্গায়ন ও পুনর্ভাষ্যের উদ্যম। আপাতত এই প্রত্যাশায় নিবেদিত হচ্ছে এ বইয়ের আদ্যোপান্ত পরিমার্জিত
সংস্করণ।

বইটি মোবাইলে পড়তে স্কেন করুন

প্রতীচ্যের সাহিত্য তত্ত্ব